বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:৩১ পূর্বাহ্ন

বারবিকিউয়ের তাপে ব্রয়লার লাগামছাড়া

বারবিকিউয়ের তাপে ব্রয়লার লাগামছাড়া

স্বদেশ ডেস্ক:

শীতের মৌসুমে বিয়েশাদি, পিকনিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা। এরই মধ্যে থার্টি ফার্স্ট নাইটে বারবিকিউ আয়োজন থাকায় চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মুরগি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারাও। এমনটাই জানালেন রাজধানীর মালিবাগ বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. ফারুক হোসেন।

আমাদের সময়কে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকেই ব্রয়লারের বিক্রি অনেক হারে বেড়েছে। আজ চাহিদা অনেক। অনেক ক্রেতাকে মুরগি দিতেও পারিনি। শুক্রবার এক কেজি ২০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগির চাহিদা সব থেকে বেশি। দুপুরের মধ্যেই এ আকারের মুরগি বিক্রি শেষ হয়ে গেছে আমার। অন্য দোকানগুলোতেও একই অবস্থা। ছোট মুরগি নেই। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনে বারবিকিউ করায় ছোট মুরগি বেশি ব্যবহৃত হয়। তাই ছোট মুরগির বিক্রি বেশি হয়েছে আজ। বিকালে ছোট মুরগি না পেয়ে অনেকে দুই কেজি ওজনের মুরগিও কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

চাহিদার সঙ্গে রাতারাতি দামও বেড়েছে লাফিয়ে। রাজধানীর বাজারে কয়েকদিন আগেও ১৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগির কেজি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা পর্যন্ত। কোথাও কোথাও ২০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও ব্রয়লার মুরগি পাওয়া গেছে ১৬৫ টাকা। এর আগে বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়।

সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর কদমতলী সাদ্দাম মার্কেট বাজারের মুরগি বিক্রেতা মো. হানিফ বলেন, চলতি সপ্তাহেও ১৭০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। কিন্তু বুধবার থেকেই দাম চড়া। তবে আজ (শুক্রবার) দাম অনেক বাড়তি। কারণ চাহিদা অনেক। পাইকারি বাজারে মুরগি পাওয়া গেছে কম। যা পেয়েছি আমাদের কেনাই পড়েছে বাড়তি দামে।

কারওয়ানবাজারের মুরগি বিক্রেতা আমির-উল-ইসলাম বলেন, করোনার পর হোটেল-রেস্তোরাঁ, কমিউনিটি সেন্টারসহ সবকিছু আবারও চালু হওয়ায় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে। এ ছাড়া শীতকালীন বিয়েশাদি, পিকনিক, বারবিকিউ পার্টিসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের সংখ্যাও বেড়ে যায়। তার ওপর সাপ্তাহিক ছুটির দিনের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। তা ছাড়া এখন থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন উপলক্ষেও রাজধানীতে অনেকে পার্টি করছেন। সব মিলিয়ে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। দাম অনেক বাড়তির পরও বিক্রি থেমে নেই।

দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কাপ্তান বাজারের পাইকার ব্যবসায়ী মো. আলী আজম বলেন, পাইকারি কিংবা খুচরায় দাম বাড়ে না। দাম বাড়ে পরিবহন খরচে। তা ছাড়া ঠা-ার কারণে খামারে মুরগি সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানীতে এখন মুরগি কম ঢুকছে। খামারেও দাম বাড়তি। বর্তমানে চাহিদা অনেক বেড়ে যাওয়া অনেকটাই বাড়তি দামে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে।

তবে খামারিরা বলছেন ভিন্ন কথা। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কাচিয়ারা গ্রামের ’প্রোটিন হাউসের’ উদ্যোক্তা আমিনুল রহমান বলেন, খামার পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। কারণ একদিনের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার দাম দ্বিগুণ বেড়ে এ বছর প্রতিপিস ৫০-৫২ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। পাশাপাশি পোলট্রি ফিডের দামও বেড়েছে। সব খরচ রেখে চলতি সপ্তাহেও আমরা খামার থেকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছি ১২৫ থেকে ১৪০ টাকা পর্যন্ত। এ মুরগি ঢাকার বাজারে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকার বেশি বিক্রি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশি দামে।

বাজারে দাম বাড়লেও খামারিরা মুরগির দাম পাচ্ছেন না উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক চাষি মামুন আমাদের সময়কে বলেন, খামারে মুরগির দাম রোজ রোজ বাড়ে না। পরিস্থিতির কারণে বাড়লেও সময় লাগে। কিন্তু বাজারে গেলে দেখা যায় প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে। খামারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায়। অথচ রাজধানীতে এসে সেই মুরগি ৪০-৫০ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। খামারিদের রক্ষার্থে এ টাকা কাদের পকেটে যায়, তা খুঁজে বের করা প্রয়োজন। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা ফোনে ফোনে মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। সে দামে খামার থেকে মুরগি সংগ্রহ করে পাইকারদের সরবরাহ করছেন। এ সিন্ডিকেট না ভাঙলে দাম অসহনীয় পর্যায়ে থাকবে, খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877